Menu

মন্দির বাহির কঠিন কপাট

Last Update : January 21, 2024


মন্দির বাহির কঠিন কপাট

গোবিন্দদাস


মন্দির বাহির কঠিন কপাট।
 
চলইতে শঙ্কিল পঙ্কিল বাট ।।
 
তহিঁ অতি দুরতর বাদর দোল।
 
বারি কি বারই নীল নিচোল ।।
 
সুন্দরি কৈছে করবি অভিসার।
 
হরি রহ মানস-সুরধুনী-পার।।
 
ঘন ঘন ঝন ঝন বজর-নিপাত।
 
শুনাইতে শ্রবণে মরম মরি যাত।।
 
দশ দিশ দামিনী দহন বিথার। 

হেরইতে উচকই লােচন-তার ৷৷
 
ইথে যদি সুন্দরি তেজবি গেহ। 

প্রেমক লাগি উপেখরি দেহ।।
 
গােবিন্দদাস কহ ইথে কি বিচার।
 
ছুটল বাণ কিয়ে যতনে নিবার।

পূর্বসূত্র


এটিও গােবিন্দদাসের পদ। এই পদে প্রকৃত অভিসারের বর্ণনা রয়েছে। অভিসারের জন্য রাত্রিই প্রশস্ত সময়। এজন্য নিশাভিসার দ্বিবিধ– মতােভিসার ও জ্যোৎস্নাভিসার । অধিকাংশ সময়ে তমােভিসারে রাধিকার পরিধেয় হবে নীল, আভরণও নীল কুসুমের অঙ্গে মৃগমদের অনুলেপন।

আরো পড়ুন :  অঙ্কুর তপন তাপে যদি জারব

গােবিন্দদাসের এই পদ শুধু তমােভিসার নয় বর্ষাভিসারই বটে। তিনি পরিবেশকে যতদূর সম্ভব প্রতিকূল করে তুলেছেন। তার মধ্যে শ্রীরাধার প্রেমের নিগৃঢ়তাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সামগ্রিক অর্থ


মন্দিরের বাইরে শক্ত দরজা। চলবার পথ শঙ্কাময় এবং দুর্গম (পঙ্কিল), তার ওপর বহুবিস্তৃত বর্ষার ধারা ঝেঁপে ঝেঁপে আসছে। তােমার নীল নিচোল কি তাকে নিবারণ করতে পারবে? সুন্দরি ! তুমি কীভাবে অভিসার করবে ? হরি মন-গঙ্গার ওপারে বাস করেন। ঝপ ঝপ শব্দে ঘন ঘন বজ্রপাত হচ্ছে। শুনে বুক শুকিয়ে যাছে (মরে যাচ্ছে)। দশ-দিকে বিদ্যুতের বিস্তার দেখে তার চোখ উচ্চকিত হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে কি সুন্দরি তুমি গৃহত্যাগ করবে ? প্রেমের জন্য উপেক্ষা করবে দেহ ? 

আরো পড়ুন :  শ্রীদাম সুদাম দাম  শুন ওরে বলরাম

গােবিন্দদাস বলেছেন, এতে বিচার-বিবেচনার কি আছে ? যে বাণ একবার ছােটা শুরু করেছে, সে কি আর যত্নেও ফিরে আসে ? 

তাৎপর্য


এটি খাঁটি অভিসারের পদ। সর্বপ্রকার দৈহিক ও মানসিক বাধা অতিক্রম করে ভক্তকে ঈশ্বর উদ্দেশে অভিসার করতে হয়। বাহ্য দৃষ্টিতে এত বাধা অতিক্রম করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু যার মনে ঈশ্বরের সংকেত এসে পৌঁছেছে তার পক্ষে কোনাে বাধাই বাধা নয়। সে অভিসার করবেই। তাকে নিবৃত্ত করা অসম্ভব ব্যাপার।

আরো পড়ুন :  আলো মুঞি জানো না

error: Content is protected !!